মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের সুবিধা

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২২ সময়ঃ ৭:৩৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৩৯ অপরাহ্ণ

বিশেষ প্রতিবেদন

বহু প্রত্যাশার আর বহু প্রতীক্ষা শেষ হয়েছে। চলতে শুরু করেছে মেট্রোরে। বাংলাদেশের অহংকারের পালকে যুক্ত হলো আরও একটি নতুন মুকুট।

স্বাধীনতার ৫১তম বছরে দেশ প্রথমবারের প্রবেশ করল মেট্রোরেলের যুগে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন, পরিবেশ উন্নয়নসহ দ্রুতগামী অত্যাধুনিক এ গণপরিবহন রাজধানীবাসীর জনজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই মেট্রোরেলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য থাকছে যাতায়াত সুবিধা। উদ্বোধনী দিনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন হুইল চেয়ার নিয়ে মেট্রোরেলে উঠেছেন।

কাল (২৯ ডিসম্বর) থেকে জনসাধারণ দিনে চার ঘণ্টা (সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত) মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন। শুরুতে চলাচল সীমিত রাখলেও ধীরে ধীরে চলাচলের সময় বাড়ানো হবে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরোদমে চালু হবে মেট্রোরেল। এই পথের দৈর্ঘ্য ১১.৭৩ কিলোমিটার এবং মোট স্টেশন রয়েছে ৯টি। এই পথের সর্বোচ্চ ভাড়া ৬০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।

এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ও খর্বকায় ব্যক্তিরা যাতে টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে সহজে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্য অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতায় টিকিট বুথ রাখা হয়েছে। একইভাবে হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীরা যেন টিকিটি ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

এছাড়া হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীরা পেইড জোনে সহজে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য হুইল চেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ভাড়া পরিশোধের প্রশস্ত গেট করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের লিফটে সহজে ওঠা-নামার সুবিধার্থে লিফটের ভেতরে হাত দিয়ে ধরার হাতল, নিম্ন উচ্চতায় কন্ট্রোল প্যানেল ও নিজের অবস্থান বোঝার জন্য আয়না রাখা আছে। লিফটের কন্ট্রোল প্যানেলে ব্রেইল পদ্ধতিতে নির্দেশনাও রাখা আছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে স্টেশনে ওঠা-নামার জন্য লিফটের সামনে ঢালু পথ (র‌্যাম্প) বানানো হয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কনকোর্স এলাকায় বিশেষ সুবিধা সম্বলিত ও সজ্জিত ওয়াশ রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাকপ্রতিবন্ধী ও বধির যাত্রীরা ডিজিটাল নির্দেশিকা অনুসরণ করে স্বাচ্ছন্দ্যে মেট্রো স্টেশনে ও মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। অন্ধ যাত্রীদের মেট্রো স্টেশনে চলাচলের জন্য ব্লাইন্ড স্টিক ব্যবহারের সুবিধার্থে হলুদ রঙয়ের ট্যাকটাইল পথের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অগ্রাধিকার আসন সহজে বোঝার জন্য টয়লেট, লিফট, প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনের ভেতরে শনাক্তকারী চিহ্ন আছে।

স্টেশন এলাকায় এবং ট্রেনের অভ্যন্তরে অডিও ও ভিজুয়াল ইনফরমেশন সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে অন্যান্য যাত্রীদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীরাও শোনা ও দেখার মাধ্যমে সহজে মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। যাত্রীদের পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা রোধে এবং হুইল চেয়ার ও ব্লাইন্ড স্টিক ব্যবহারের সুবিধার্থে ট্রেনের কোচের ফ্লোর এবং স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের উপরিভাগ একই সমতলে রাখার জন্য কোচের নিচে অত্যাধুনিক এয়ার ব্যাগ সাসপেনশন সংযোজন করা হয়েছে। কোচের বহির্ভাগ এবং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সর্বত্র এমনভাবে ফাঁকা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা নিরাপদে ও সহজে ট্রেনে ওঠা-নামা করতে পারেন।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G